দুই সহস্র একাদশ সাল — খৃষ্টীয় অব্দের ২০১১তম বৎসর; বহুকাল ধরিয়া এই সালগণনা পদ্ধতিকে অ্যানো ডোমিনি বা “প্রভু’র বৎসর” বলিয়া আসিতেছি, কিন্তু অধুনা ইহাকে কমন এরা বা “সাধারণ সাল” বলিবার চল হইয়াছে – কারন এইটিই সর্বধিক ব্যবহৃত পঞ্জিকা-বৎসর যা একসময় কেবল চার্চ-শাষিত বা খৃষ্টানপ্রধান য়্যুরোপে ব্যবহৃত হইলেও এখন ধর্ম ও জাতি নির্বিশেষে তাবৎ দুনিয়াতেই ব্যবহৃত হইতেছে ; ডিজিটাল ব্যবস্থা, কম্পিউটারে, আন্তর্জাতিক মান্য ব্যবস্থায়ও এটিই একমাত্র সর্বজনস্বীকৃত সাল – সেজন্যই কমন এরা ।
যাহাই হৌক, প্রতিবছরের ন্যায় ২০১১-ও অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা লইয়া আমাদের মাঝে আসিলেও নানাবিধ প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি নিয়াই এই বছরের সমাপ্তি – তাই বৎসরের শেষ ঘন্টায় বসিয়া (লিখিতে শুরু করিলেও শেষ করিতে পারি পরের দিবসে) ব্যক্তিগত, দেশীয় ও অন্যান্য আঙ্গিকে বৎসরটির কিছু দিক ফিরে দেখিতে উদ্যত হইলাম ।
ব্যক্তিগত পর্ব
২০১১ সাল আমার জীবনে মাইলফলক বৎসর না হইলেও বেশ কিছু ঘটনায় আলোকিত – গতবৎসরের শেষে পাসপোর্ট সংগ্রহের আবেদন করিলে মাত্র দুই কি তিন মাস অতিক্রান্ত না হইতেই এবৎসর জানুয়ারিতে আমি বাংলাদেশের পাসপোর্ট হাতে পাই । এই বৎসরেই আগস্টের শেষে আমি কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনে স্যামসং সদরদপ্তর – কোরিয়াতে দুই মাসের ভ্রমণে যাই । তার কিছু পূর্বেই আমি বিশ্বের সকল স্থানের জন্য মুসলিম নামাজাদি, ইফতার-সাহরির সময় গণনা করিবার ওয়েবভিত্তিক ওয়াক্তস্কোপ নামীয় এক বস্তু তৈয়ারি করি – কোরিয়া সফরে ইহা আমারও বিশেষ কার্যে আসে । গ্রীষ্মের শুরুতে আমি আমার ওয়েব সাইটের সহিৎ ওয়ার্ডপ্রেস নামক ওয়েব-প্রকাশনা সহায়ক বস্তুখানি সংযোজন করি এবং সময়ের স্বল্পতা থাকিলেও কিছু থিমও তৈরি করিয়া ফেলি – যার দরুন আমি “সাধুবচন” নামীয় এই খেরোখাতা প্রকাশ করিতে শুরু করিতে পারি; সাধুবচনে মূলত আমি সাধুভাষা চর্চা করিয়া নিজ মনোভাব প্রকাশের চেষ্টা করিতেছি – একই সাথে যাহাতে বাংলাভাষার এই বিশেষ স্বাদুরূপ কালেভদ্রে পঠিত-লিখিত হইয়া জীবিত থাকিতে পারে সেই আশাও প্রেরণার রূপ যুগাইয়াছে । কিছুকাল পর আমার কাব্য-কুকর্মের খাতা “সুলল সংগ্রহ“-ও ওয়েবমাধ্যমে প্রকাশ করিতে শুরু করিয়া দেই এবং সেই আনন্দে ধেই ধেই করিয়া নাচিয়া নতুন কতিপয় কাব্যও (নয়খানা পদ্য ও আষ্টখানা লিমেরিক) রচনা করিয়া বসি – এর পূর্বে প্রায় চারি বৎসর কাল ঠিকমত কাব্যচর্চা করিতেই পারি নাই ।
২০১০ সালে জন্মদিনোপলক্ষে আব্বার নিকট হইতে কম্পিউটারযোগে আঁকিবার জন্য ব্যবহৃত ড্রয়িং প্যাড উপহার পাইলে এই বৎসর তৎযোগে কিছু চিত্রাঙ্কেনরও অবকাশ হয় – তাহা সত্ত্বেও এই বৎসরে মাত্র পঞ্চখানি দেয়ালচিত্র কাস্টোমাইজ.অর্গ-এ প্রকাশ করিতে সক্ষম হই । ইহার মধ্যে অবশ্য একুশে ফেব্রুয়ারী লইয়া বাংলা বর্ণসমূহের সমন্বয়ে কৃত চিত্রখানি বন্ধুমহলে বিশেষ সমাদর প্রাপ্ত হয়। কিয়দ পরেই বাংলা নববর্ষ লইয়া কৃত নববর্ষ শিরোনামের কার্য – ঠিক মনঃপূত না হইলও ইহাও বেশ কদর পাইয়াছে । বিগত বছরের ন্যায় এই বছরেও বারকয়েক গুগল ডুডল বানাইতে ইচ্ছা পোষণ করিলেও আমি, সিয়াম, ফাহিম বা প্রতীকের মধ্যে কেউই কাজটি সম্পন্ন করিতে পারি নাই; পরিশেষে বিজয় দিবস উপলক্ষে দিবসের ২-৩দিন পূর্বে অকস্মাৎ সাইবারজবৎ জুড়িয়া গুগল ডুডল করিবার জোড় তৎপরতা শুরু হইলে আমার এক অনুজ আশিক রহমান অপু আমার একই দিবস উপলক্ষে কৃত বিজয় আনন্দে আজ এর উপর ভিত্তি করিয়া ডুডল প্রস্তাব করে । অতঃপর, সকলেই যখন জানিতে ও বুঝিতে পারে যে ১-২ দিনের মধ্যে কোন রূপেই গুগল ডুডল প্রদান সম্ভব নহে তখন সাইবার জনতা পরবর্তী একুশে ফেব্রুযারীতে অনুরূপ কিছু করিবার আশা প্রকাশ করে… আমি ও প্রতীক এইবার আর অলসতা না করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করি ।
জানুয়ারিতে আমার ইংরেজি ভাষার ব্লগখানি ১৫ সহস্র পাঠক ছাড়াইয়া যায় – বৎসর শেষে তাহা চল্লিশ সহস্র-ও ছাড়াইয়া যায় – এবছরের শুরুতেই উক্ত ব্লগখানিকে আমি আমার নিজস্ব ঠিকানা ins.nafsadh.com তে প্রকাশ করিতে শুরু করি যাহা পূর্বে ওয়ার্ডপ্রেস.কমের ঠিকানায় প্রকাশ হইতো ।
এবছর মার্চে আমার সুপ্রিয় পিতামহ অকস্মাৎই পরলোকগমণ করেন, অশ্রুসিক্ত নয়নে তাঁহাকে বিদায় দিয়া আসি ১১ মার্চ তারিখে। তিনি অসুস্থ হইয়া ঢাকায় হাসাপাতালস্থ হইলেও তাঁহার সহিত শেষ দর্শনের সুযোগ হয় নাই – এই ক্লেশ আমার রহিবে। তাঁহাকে হারনোর বেদনা আমাকে ও আমার পরিবারের সকলকে মর্মাহত করে। আল্লাহ তাঁহার আত্মার মাগফিরাত করুন ও তাঁহাকে জান্নাতের উত্তম স্থান দান করুন। আমীন॥
২০১১ সালের কতিপয় ঘটনার মধ্যে এই মূহুর্তে স্মৃত হইতেছে যে, জানুয়ারিতে আমার মাতৃকুলসম্বন্ধীয় ভ্রাতাভগ্নিগণের সহিৎ টাঙ্গাইলে বিশেষ মিলন হয়; এই মাসেই কতিপয় বন্ধুর সহিৎ বানিজ্য মেলা নামের কারবারে আমরা যাই – বন্ধুসহযোগে ইহা আমার প্রথম বানিজ্যমেলা ভ্রমণ, ইতঃপূর্বে পারিবারের সহিত যাওয়া হইয়াছিল – যদিও অধিক জনসমাবেশ আমাকে বিশেষ আনন্দিত করিতে পারে না । ফেব্রুয়ারির বইমেলা বাঙালির বিশেষ আনন্দের উৎস এবং এই বৎসর যথেষ্ট আয়েশের সহিৎ বার কয়েক বইমেলা গমন করিতে পারি – যদ্যপি পূর্বের ন্যায় বইমেলায় ভিড় আর দৃষ্ট হয় না – তথাপি বইমেলা আমার প্রাণের মেলা হইয়াই আসে। ২০১০ সালে পরীক্ষা থাকার দরুন বইমেলায় আসিতে পারি নাই, এবং তার আগের ০৭,০৮,০৯ ও বিশেষ আয়েশের সহিৎ বইমেলা ভ্রমণ হয় নাই। আমরা ইহার মাঝেই “বর্দ্ধমান হৌজ” তথা বাংলা একাডেমি মূল কার্যালয়-ও দর্শন করি । ফেব্রুয়ারিতে আমি অর্ক ও শোভনের সহিৎ প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন বা নাড়িকেল জিঞ্জিরা’য় অবকাশ ভ্রমণ করি – ইচ্ছা সত্ত্বেও সংবর্ষে এই একের অধিক আর সফরে যাইতে পারি নাই । পঞ্চবৎসর পূর্তি উপলক্ষে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট সিএসই ২কে৫) বন্ধুগণ একত্রে মিলিত হই মার্চের ৫ তারিখে । আমাদিগের পুরুষ বন্ধুগণের মধ্যে সর্বপ্রথম বিবাহের বন্ধনের আবদ্ধ হইল রাহ্হ্হ্ ভাই এই জুন মাসেই । রমাদানের মধ্যখানে হঠাৎ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হইয়া আমি কিছুকাল হাসপাতালে যাপন করি – এতদহেতু আমাকে স্বীয় উদ্যোগে আয়োজিত বন্ধুসকলের ইফতার খানা-আয়োজন পরিত্যাগ করিতে হয়। সুস্থ না হইতেই আমি কোরিয়া ভ্রমণে চলিয়া যাই । কোরিয়াতে সিউল ও সুওন সংলগ্ন বিভিন্ন স্থান সন্দর্শন হয় ও বিশেষ অভিজ্ঞতা প্রাপ্ত হই । অক্টোবরে স্বীয় ওয়েবগৃহের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করিতে সক্ষম হই । একালেই আমি প্রথম ত্রিমাত্রিক চলচ্চিত্র দর্শনের স্বাদলাভ করি – যদ্যপি মুভিখানার নির্মান বিশেষ প্রসিদ্ধ হয় নাই – তথামি ত্রিমাত্রিক চিত্র বলিয়া কথা । নভেম্বরে আমি আমার আলমা ম্যাতার তথা শিক্ষণমাতৃকা কুয়েট হইতে ঘুরিয়া আসি – উক্ত স্থান আমার নিকট বিশেষ আবেগের স্থান । আমাদিগের সুহৃদ অভি উচ্চশিক্ষার্থে মার্কিন মুলুকে গমন করে বছরের শেষলগ্নে ।ডিসেম্বরে পুনরায় চন্দ্রগ্রহণ সংঘটিত হয় – জুনমাসের চন্দ্রগ্রহণ মেঘরাজিকার হেতু দৃষ্ট না হইলেও এইটি সম্যক দৃষ্ট হয় । এইসকল ব্যতিকরেকেও আরো নানাবিধ ক্ষুদ্র-বৃহৎ ঘটনার দ্বারা পরিবৃত হইয়া বছর যাপিত হইলো… এক্ষণে ইহাকে বিদায় জানাইতেছি ।
দেশ ও বিশ্ব পর্ব
বর্ষটি দেশে ও বিশ্বে নানাবিধ আলোচিত ঘটনার দ্বারা অতিক্রান্ত হয় । জানুয়ারির মাঝামাঝি ফেলানির ঘটনায় সমগ্র দেশ বিক্ষুব্ধ হইয়া বৎসরের সূচনা করে, ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর কতিপয় ঘটনাও প্রভূত আলোড়ন সৃষ্টি করিয়াছিল । ১৭ ফেব্রুয়ারি এক অসাধারণ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কার সহিত সম্মিলিতভাবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজনের শুভসূচনা করে – উদ্বোধন অনুষ্ঠান ভারতের শিধু সিং ও কতিপয় ব্যক্তি ব্যাতীত তাবৎ দুনিয়ায বিশেষ প্রসংশা পায় – লোকে কহিতে থাকে ক্রিকেটে এমন অনুষ্ঠান আর হই নাই। তবে আমরা বিশ্বকাপে দ্বিতীয় পর্যায় (রাউন্ড) এ যাবার আশা করিলেও তাহা হয় নাই – ফলে ক্রীড়ামোদি আমরা বিশেষ আশাহত হই ।
মার্চ মাসে ড. ইউনুস ও গ্রমীণ ব্যাংকের সহিত সরকারি আচরন লইয়া সারাদেশ বেশ চঞ্চল হইয়া উঠে – আদালতের রায় লইয়া বিবিসি মত দেয়, “আদালত যেন শাষকের দর্পন”। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান হইতেও এই ঘটনা লইয়া বেশ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া আসিতে থাকে ।
১১ মার্চে জাপানের সুনামি ও তাহার ফলশ্রুতিতে ফুকুশিমা ট্রাজেডি সমগ্র বিশ্বকে আলোড়িত করে, বিশেষ করিয়া প্রযুক্তিবিদগণ পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রযুক্তিকে আরো গভীরভাবে ভাবিবার অবকাশ পান।
মার্চেই সাংসদ আন্দালিবের বক্তব্য বিশেষ আলোচনার সৃষ্টি করে ও বিভিন্নমাধ্যমে উহার ভিডিওচিত্র অবশ্য দ্রষ্টব্য হইয়া পরে । এপ্রিলে জাতীয় নারীনীতি লইয়া বিশেষ দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় এবং ইহা লইয়া হরতাল ও বিশেষ রণাবস্থার অবতারণা হয়।
মে মাসে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য ব্যারেলপ্রতি ১০ডলার হ্রাস হইলেও পক্ষান্তরে বাংলাদেশে লিটারপ্রতি দুই টাকা বৃদ্ধি হয় – পরবর্তীতে আরও কয়েক দফা গ্যাস ও তেলের মূলবৃদ্ধি ঘটে; বর্ষের শেষে আসিয়াও তেল লিটারপ্রতি ৫টাকা বাড়ে, গ্যাসের মূল্য ১৬ টাকা হইতে তিনগুণ বাড়িয়া যায় – বিদ্যুৎ ও গৃহস্থলী গ্যাস সরবরাহেরও অবস্থা তথৈবচ । মে মাসের এ সময়েই-ই রবি ঠাকুরের জন্মের দেড়শতবর্ষ জয়ন্তী পালিত হয় এবং এর কিছু পাশ্চাত্যকরণের বিশেষ সমালোচনার সৃষ্টি করে । জুনে ঢাকা ফ্যাশন উইক একাধারে ব্যবসায়িক সাফল্য ও নাগরিক সমালোচনা লাভ করে ।
ভিকারুন্নিসার পরিমল কাহিনী-ই থাকে জুলাইয়ের মূল আলোচনার বিষয় । জুলাইতে আদমশুমারির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যাহাতে দেশের জনসংখ্যা অনুমিত ও পূর্বের জরিপের তুলনায় কম বলিয়া প্রতিভাত হয় । আগস্ট মাসে, তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর সহ কিছু খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হইলে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা লইয়া বিশেষ বিতন্ডা মঞ্চস্থ হয় । এই বৎসর আমেরিকা ও ভারতের মডেল অনুযায়ী বাংলাদেশেও “কে হতে চায় কোটিপতি” শীর্ষক অনুষ্ঠান শুরু হয় বাকের ভাই খ্যাত সাংসদ নূরের উপাস্থাপনায় । অক্টোবরে সাইবার জগতে বাঙালি-বাংলাদেশি প্রশ্ন কিছুটা আলোচনার অবকাশ পায় ও এই লইয়া আমার খেরোখাতায় পূর্বতন লেখাটি লিখিত হয় । পদ্মা সেতু লইয়া বৎসরের শেষদিকে মাঠ উত্তপ্ত হয়। টিপাইমুখি বাঁধ লইয়া সরকারের ভূমিকা প্রশ্ন সৃষ্টি করে নভেম্বর ও ডিসেম্বরেও । পাক-বাংলা ক্রিকেট খেলায় কিছু বাংলাদেশি নাগরিকের পাকি-সমর্থন বিশেষ নিন্দা ও দুশ্চিন্তার বিষয় হইয়া ওঠে এ সময় । বিজয়ের মাসেই মুক্তিযুদ্ধকালে স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধে অবস্থান কারীদের নেতা হিসেবে পরিচিত গোলাম আযমের সাক্ষাৎকার অনেকের আলোচনায় উঠিয়া আসে; যুদ্ধাপরাধের বিচার সহ বেশ কিছু বিষয় এসময় আলোচিত হইতে থাকে।
উত্তাপসৃষ্টিকারী নানা ঘটনার হেতুই বোধ করি, বৎসরের শীত বেশ জাঁকোয়া রূপে আবির্ভূত হইলেও দক্ষিণায়নের দিন হইতেই হঠাৎ করিয়া শীত কমিয়া বেশ গরম অনুভূত হইতে থাকে ।
বাংলাদেশ এ বৎসর রাশিয়ার সহযোগিতায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির চুক্তি করে আবার রাশিয়ার সৈনিকদের প্রশিক্ষণ দেবার আরকটি চুক্তিও হয়।
২০১০ এ সৃষ্ট পুঁজিবাজার অস্থিরতা ২০১১ জুড়েও চলিতে থাকে ।
বৎসর জুড়িয়া বিশ্বজুড়ে সর্বাধিক আলোচিত বিষয়ের মধ্যে স্থান লইয়াছিল মূলত আরব বসন্ত; এতদ্ব্যাতীত ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র, স্বর্ণের মূল্য বৃদ্ধি, মার্কিন ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি মূল্যের নিয়মিত হ্রাসবৃদ্ধি ইত্যাদি বিশ্বমাধ্যমে আলোচিত হইয়াছে ।
প্রযুক্তি পর্ব
বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক কোন বহুজাতিক কোম্পানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্যামসং আরএ্যান্ডডি ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ করে – ইন্টেল, এলজি, এএমডি, আইবিএম সহ কতিপয় আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগার খুলিবার প্রচেষ্টার কথাও আমাদের কর্ণগোচর হয় । মাইক্রোসফটের ইমাজিন কাপে এবৎসরই বাংলাদেশ তলিকাভুক্ত হইয়া অংশ লয়, মাইক্রোসফট ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার ৬ কে অতিবৃদ্ধ ঘোষণা করিয়া ইহা প্রতিস্থাপনে উদ্যত হয় । এবৎসর এইচটিএমএল ৫ প্রকাশিত হয় ও সকল প্রধান ব্রাউজার নতুন প্রযুক্তির উৎকর্ষে আরও ব্যবহার-মনোহর হইয়া উঠে । এপ্রিল ফুল বা বসন্তের বোকা বানাইবার উৎসবে গুগল এবার সর্বাধিক ধোকা (hoax) ছাড়িয়া বিশেষ খ্যাতি পায়, গুগলের সিইও পদ এরিক স্মিড্থ ছাড়িয়া দিবার পর প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ আবারো সিইও হন। গ্রীষ্মেই কিউবি তাহাদের ইন্টারনেট সংযোগের গতি পরীক্ষামূলক ভাবে দ্বিগুণ করিয়া দেয় ও পরে সকলের সংযোগ-গতিকে দ্বিগুণের স্থায়ী রূপান্তরিত করে । বিশ্বের সর্ববৃহৎ অনলাইল ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান জিংগা শেয়ার মার্কেটে প্রবেশ করে । গুগল জুন-জুলাইতে মরিচার ন্যায় লাল বর্ণ ধারণ করিতে শুরু করে ও গুগল প্লাস প্রকাশ করে – যাহা সূচনায় বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করিয়া খোমাখাতা ফেসবুককে হূমকির মুখে পতিতে করিলেও বছর শেষ না হইতেই গুগল প্লাস কোনক্রমেই ফেসবুক কে হটাইয়া মূল ধারা হইতেছে না – এইটি প্রতীয়মান হয় । এছাড়া, স্যামসং মোবাইল বিভাগের সফল সিটিও ওমর খান কোম্পানি ছাড়িয়া যান বৎসরের মধ্যদিকে; আগস্টের ৬ তারিখ ওয়েবের ২০ বছর পূর্ণ হয়; দোয়েল নামীয় বাংলাদেশে সংযোজিত ল্যাপটপ বাজারজাত হইয়াছে ২০১১ সালে । ফেসবুক এবর্ষেই তাহাদের প্রোফাইলের নতুন ধারণা টাইমলাইন প্রচলন করে ।
এই বৎসরেই আইবিএম পিসির ৪০ বৎসর পূর্ণ হয় এবং তাহা হইতে না হইতেই এই প্রযুক্তির পুরোযায়ীগণ কর্ম ও বিশ্ব ত্যাগের যাত্রা শুরু করেন । আগস্টে দায়িত্ব ছাড়িবার কিয়দপর অক্টোবরে দুনিয়াও ছাড়িয়া যান কম্পিউটার প্রযুক্তির অন্যতম মহান কারিগর স্টিভ জবস। একই মাসে প্রোগ্রামিং ভাষা সি ও প্রাচীন কম্পিউটার ব্যবস্থার জনক মহান ডেনিস রিচি-ও ইহধাম ত্যাগ করেন।
যাহাই হৌক, অন্যান্য বর্ষের ন্যায় ২০১১ও নানাবিধ ঘটনায় রঞ্জিত হইয়া আমাদের ছাড়িয়া গেলো।
২০১১ শেষ করিয়া ২০১২’র শুরুতেই দুটি দুঃসংবাদ শুনিলাম, এক বর্ষের প্রথম প্রহরে বুয়েটের রণক্ষেত্র হইবার ঘটনাটি জানিলাম – আর সকালের নিদ্রা ভাঙিল একজন সহপাঠী ও সুপ্রিয় বন্ধুর হঠাৎ আমাদের ছাড়িয়া যাইবার ঘটনা জানিয়া । দুইটিই অবশ্য ২০১১ তে ঘটিয়াছে, কিন্তু জানিতে পারি ২০১২তে । সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাইলেও তাই কহিতে পারিনা আসলে কিরূপ হইবে এই বর্ষ ।