নোবেলালাপ ২০১৪

দুনিয়ার তাবৎ মানুষেরই দিলে বোধকরি নোবেল নামক পুরষ্কারটি পাইবার লুকায়িত খায়েশ রইয়াছে । এইটি আসলেই একখানা খুবই আকর্ষনীয় ও সম্মানের প্রাপ্তি । তবে ইহা বোগলদাবা করা ঠিক সহজ কোন কর্ম নয় ।

পদার্থবিজ্ঞান, চিকিৎসা বা রসায়নে ইহার অর্জন করিতে যারপরনাই খাটুনি ও মেধার খরচ করিতে হয় । সাহিত্যের ব্যাপারটি আমার ঠিক বোধে আসে না । বিজ্ঞানের গুণনত মাণ একই মাপকাঠিতে মাপা গেলেও দুনিয়ার তাবৎ ভাষার সকল সাহিত্য কিরূপে পাশাপাশি মাপা যাইতে পারে? অর্থনীতিতে নোবেলের সম্মানে যেই পুরষ্কারটি দেয়া হয় তাহাও সহজ কম্ম নয় ।

পুরষ্কার হিসেবে নোবেলকে সর্বোচ্চ সম্মানের ধরা হয় । কিন্তু এইটে জ্ঞানের সব বিভাগের জন্য প্রচলিত নয়; এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে অবদানের জন্য নয় বরং মানবকল্যানে প্রত্যক্ষ অবদান রাখিবার জন্যই এইটি দেয়া যায় । অথচ, বিজ্ঞানের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রত্যক্ষ মূল্যায়ন তাৎক্ষণিক হয় না । একারনেই, আইনস্টাইনের সবচে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব নিয়ে হইলেও তাঁহাকে পুরুষ্কৃত করা হইয়াছে ফটোইলেক্ট্রিক ইফেক্টের জন্য । অনেক ব্যাক্তি আছেন, যাহাদের কর্ম অনেক গুরুত্বপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও নোবেল দিয়ে তাঁহাদিগকে সম্মানিত করা যায় নি ।
তবে, বিভিন্ন শাখায় নোবলের ন্যায় সর্বোচ্চ সম্মানের আর কিছু পুরষ্কার প্রচলিত আছে । যথাঃ- ট্যুরিং অ্যাওয়ার্ড, ফিল্ড্‌স মেডেল ইত্যাদি ।

যাহা হৌক, শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার প্রাপ্তি নিয়ে সবসময়ই সকলেই নানাবোধ প্রশ্ন করিয়া আসিয়াছে । অনেকেই ইহাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার ও কৌশলের অংশ বলিয়া মনে করিয়া থাকে ।

বাঙালির পরশ্রীকাতরতা নতুন নয় । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য নোবেল লাভকে প্রশ্ন করিয়া অনেকে কহে, ‘নজরুল কেন পাইল না’! ইহা সঠিক যে, রবি ঠাকুর পাইলে নজরুলও পাইবার যোগ্য; আমার মতে হুমায়ূন আহমেদও । কিন্তু সকল যোগ্য ব্যক্তিই আসলে পুরুষ্কারটি পান না; কিন্তু যাহারা পাইছেন তাহারা কিন্তু কম শ্রদ্ধেয় নন, কম যোগ্যতার নন । কয়েক বৎসর পূর্বে, ব্যাংকার ড. মুঃ ইউনুস শান্তিতে নোবেল পাইলে বাঙালি তাঁহাকে সম্মাননা জানানো দূরে থাক, বরং তাহাকে নাস্তানাবুদ করিতে ছাড়ে নাই । মালালা নোবেল পাওয়াতে সকলেরই চোখ টাঁটাইবে, এতে আর সন্দেহ কী?

তবে আমার কথা হইল, গালমন্দ না করিলেই নয় কি? আপনি তো এমনিতেই শান্তিতে নোবেলকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না ।

পরিশেষে বলিবঃ বাঙালির প্রতিবছরই “অশান্তিতে কদবেল” মেডেল লাভ করা উচিৎ ।