আজিকে ১১ই জৈষ্ঠ্য – না ইহা ঠিক করিয়া নজরে আসে নাই, জানিতাম আজ ২৫ মে; আশ্চর্য! অথচ আজ কি না প্রিয়কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী ।
বিদ্রোহী কবি, জাতীয় কবি, প্রেমের, রূপ রস, খেয়ালের কবি, গীতিকার, সুরকার, সম্পাদক, দেশপ্রেমে বলীয়ান সৈনিক, স্বাধীনচেতা ঝাকড়া চুলের বাবরি দোলানো মহান পুরুষ আমাদের এই প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম । তিনি জাত কবি, আজন্ম কবি । কাব্যের ছন্দ, সুধা রূপ সুর, চরন-বলন, কাঠামো-গঠন সকলকিছুই যেন তাঁহার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বহমান লীন । তিনি কাব্য রচনা করতেন যেন বাঁচিয়া রহিতে, মানবদেহ যেমন শ্বাস লইতে না পারিলে থাকিতে পারে না তেমনি কাব্যে না মজিলে জাত কবির মন টিকিতে পারে না । তাই শৈশব হইতেই তাহার কাব্যে বসবাস । বাংলার পাশপাশি আরবি ফারসি নানা ভাষায় কাব্যসুধা আস্বাদন করিতে করিতে তিনি লিপ্ত হন নবতর বাংলা কাব্য সৃজনে । অসাধারণ তাহার কাব্যবোধ, অপরূপ তাহার উপমা, আরও অভিনব তাঁহার শব্দচয়ন – সবমিলাইয়া তার রূপায়ন এমনই সব কাব্যের জন্মদান করিয়াছিল যে সেসকল পদ্য কাগজ কলমের, শব্দ অক্ষরের থর-বিথর হইতে অবিরল শব্দে-নৈঃশব্দে ওষ্ঠ্য-কণ্ঠ পার করিয়া হৃদয়ে, মননে পৌঁছুতো লক্ষ-শত বাঙালির শোণিতে তুফান তুলিয়া, চিন্তায় অনুরণন ঘটাইয়া — এমনি চমকপ্রদ তাহার কর্ম । সহজ সরল শিশুতোষ কবিতা (আমার নাম “সাধ” শিরোনামেও একখানা কবিতা ছিল তাঁহার রচিত, যাহা প্রাথমিক শিক্ষালয়ে পাঠ্যও ছিল আমাদিগের), লিচুচোরের ন্যায় কৌতুকছন্দ, বিদ্রোহের কবিতা, কঠিন প্রেমের কবিতা, গজল, শের, ওমরের অনুবাদ, কোরআনের কতিপয় অনুবাদ এমনকি প্রবন্ধ, কথিকা, ভাষণ — গদ্যে, পদ্যে তার বহুরং একই ছন্দে যেন বাংলা সাহিত্যকে অফুরন্ত এক সম্পদরাজি দিয়া গিয়েছে; সাথে যু্ক্ত হইয়াছে তাঁহার রচিত ও সুরপ্রথিত সঙ্গীতসম্ভার ও কতিপয় রাগ ।
সকলই মিলিয়া, কবি নজরুল বিবিধ রূপ লইয়া পরিপূর্ণ এক কবি; আমাদের প্রিয় কবি – বাংলাদেশের জাতীয় কবি । আজিকে তাহার জন্মদিবসে একটুকু কেবলি শ্রদ্ধার, ভালোলাগার নিবেদন ।