কুয়েটে ভোজউৎসব, রণক্ষেত্র – রটনা, ঘটনা

আমার বিশ্ববিদ্যালয় কুয়েটে কি হইয়াছে তাহা লইয়া নানাবিধ যল্পনা-কল্পনা, অনুমান আলোচনা হইতেছে – নানবিধ সংবাদ কর্ণগোচর হইতেছে, যাহার কতিপয় সত্য আর কিয়দংশ গুজব।
বস্তুত, কুয়েটের পরিবেশ পরিস্থিতি এক্ষণে শান্ত – ছাত্ররা সকলে নিজ নিজ বাসগৃহে চলিয়া গিয়াছে, কেহবা খুলনায় ও সন্নিকটস্থ বিবিধ স্থানে আশ্রয় লইয়াছে, কিয়দংশ ছাত্রাবাস সমূহেই পুলিশ, ছাত্রলীগ ও লীগের বহিরাগতদের নিরাপদ প্রহরায় শান্তবস্থায় অবস্থান করিতেছে; তাহারা আর কোনরূপ অশান্তি করিবে না বলিয়া আপন আপন জীবনের কসম লইয়াছে। ছাত্রীরাও অনেকেই হলেই প্রবল নিরাপত্তার মাঝে অবস্থান করিতেছে – বাহিরের অবস্থা ভালো নয় বিধায় অনেকেই টিকেট খরিদ করিয়াও বাসযাত্রা করিতে পারে নাই।

অপরাহ্ণে গুজব ছড়াইয়া যায় যে, একজন ছাত্র নিহত হইয়াছে – যাহা বস্তুত সত্য নহে; যাহার নাম শুনা গিয়াছিল সে চাপাতিতে কুপিত হইয়া বিশেষ আহত হইয়াছে – তথাপি জীবনাশঙ্কা নাহি। অবশ্য, রজানৈতিক ব্যক্তিগন জানাইয়াছে যে, প্রকৃতপক্ষে সামান্য আঘাত পাইয়া ঐ ছাত্র কিছুক্ষণের জন্য জ্ঞান হারাইয়াছিল মাত্র।

গতকল্য একুশে হলের বার্ষিক ভোজ আয়োজন ছিল, যাহার খাদ্যের মান লইয়া সাধারণ ছাত্রসকল বিশেষ মনঃক্ষুণ্ণ হয় – বিশেষত খাদ্যে বাজেট বরাদ্দ করা হইয়াছিল জনপ্রতি ৭৫০ ৮৮৫টাকা যাহা গত বর্ষের ৪৫০ হইতে অধিক। যদ্যপি এবৎসরের জন্য ইহা বিশেষ স্বল্প – দ্রব্যমূল্যের এইরূপ বৃদ্ধি ও নানাবিধ কারনে এই সামান্য অর্থে যে হলের আবাসিক অনাবাসিক সকল ছাত্রকে খাবার দিতে সক্ষম হইয়াছে খাদ্য-কমিটি — ইহাই তো ছাত্রদিগের বিশেষ পাওয়া, প্রকৃতই ইহা কমিটির রাজনৈতিক শক্তিশালী সদস্যদের বিশেষ কৃপা। অথচ স্বল্পবুদ্ধি সম্পন্ন ছাত্রসকলে ইহা মানিতে ও বুঝিতে অক্ষম হয় ও প্রভোষ্টের নিকট ইহার প্রতিকার জানিতে চায় – উক্তকালে, কমিটির সদস্য ও তাহাদের সহচরসকল অকুস্থলে উপস্থিত হইলে তাহাদিগকে সাধারন ছাত্রসকল কারন দর্শাইতে কহে ও বাকবিতণ্ডা অন্তে রাজনৈতিকদিগকে হল হইতে বাহির করিয়া দিয়া ফটক লাগাইয়া দেয়, এতদ্ব্যাতীত আরও কতিপয় ঘটনা সংঘটিত হইতে থাকে। অবগতিতে আসে যে, সাধারণ ছাত্রদিগের এহেন দুঃসাহস রাজনৈতিক অনুজদিগের বিশেষ সুনজর প্রাপ্ত হয় নাই বিধায় তাহারা দুপুরে খাইবারকালে ডাইনিং হলে ২কে৭ ব্যাচের ছাত্রসহ পূর্বরাত্রিতে বিরোধিতাকারী দুষ্কৃতিকারীদিগকে শিক্ষাদানে আগাইয়া আসে।

কুয়েটে, কয়েকশত ছাত্র দৌড়াদৌড়ি আর প্রীতিপূর্ণ মল্লযুদ্ধে আহত হইয়াছে মাত্র, কেহ মারা যায় নাই। একুশে হলের পঞ্চম তলায় যাবতীয় বস্তু ভাঙচুর করা সহ সামান্য হামলা হইলেও নিচের তালায় তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয় নাই – দালানের সকল ইট-ই অক্ষত রহিয়াছে; অন্যান্য হলসমূহেরও কোন ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয় নাই। মারামারি করিতে সামান্য ধাতব অস্ত্র ব্যবহার হইয়াছে মাত্র – কোন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হয়নাই। চাপাতি ব্যবহৃত হইলেও তাহার বিপরীত দিকই মূলত ব্যবহৃত হয়। মল্লযুদ্ধ একতরফা হইলেও অপরপক্ষের সাধারণেরা চুপচাপ রহিয়াছিল। মারামারি প্রশমিত করিতে আগাইয়া গেলে বেশ কিছু শিক্ষক আহত হন ও এক-দুইজন অধ্যাপক হামলার শিকার হইয়া হাসপাতালে গিয়াছেন – সকলেই তো আর মার খান নি ।
বিভিন্ন বর্ষের প্রথম সহ নিরীহ, আঁতেল, চুপচাপ বলিয়া পরিচিত ছাত্রগণ যেমন আহত হইয়াছে তেমন যাহারা সরব হইয়া ঘুরিয়া বেড়ায় তাহারাও একইরূপ মার খাইয়াছে, ভোজের খাবার ভালো না হইলেও মার নামক খাদ্য সমভাবে ও নিরপেক্ষভাবে বন্টনে তাহারা কোনরূপ কার্পন্য করে নাই বলিয়াই জানা যায়। প্রতি দশজনের দু-একজন গুরুতর আহত সহ বাকি সকলেও কমবেশি আহত হইয়াছে।
ইহার ফলশ্রুতিতে ছাত্রগণ অপরাহ্ণে উপাচার্যের নিকট প্রতিকার চাইতে গিয়া শান্তিপূর্ণ অবস্থান করিলেও তাহাদিগকে ছত্রভঙ্গ করিয়া দেয়া হয় – এবং কোনরূপ প্রতিকার না করিয়া কুয়েট অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করিয়া সকল হল সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে খালি (হল ভ্যাকান্ট) করিবার নির্দেশ দেয়া হয়; ছাত্ররা ইহা মানিতে না চাহিলেও তাহা বহাল রাখা হয় ও নির্দেশ দেয়া হয় যাহাতে তাহারা নিজনিজ পিতামাতার ক্রোড়ে যাইয়া শিষ্ট হইয়া বসে। অতিদ্রুত হল খালি করা সম্ভবপর না বলিলে মধ্যরাত পর্যন্ত সময় বৃদ্ধি করা হইলেও পরে পুনরায় ছয়টার মধ্যেই হলত্যাগে বাধ্য করা হয়; যদিও অনেকেই আটকা পরিয়াছে।

এসকল ঘটনা সম্পর্কে, “খাবারের মান কোনভাবেই খারাপ ছিল না” মন্তব্য করিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কল্যাণ পরিচালক শিবেন্দ্র শেখর কহেন, “একটি মহল বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে পূর্বের ন্যায় পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।”

উপরে আলোচিত ঘটনাসকল বিবিধ মাধ্যম হইতে অবগত হইয়াছি, যাহার সত্যতা আমি নিরূপনে অক্ষম। তথাপি ইহা নিশ্চিত তথ্য যে, কুয়েট অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষিত হইয়াছে, এখনো কোন ছাত্র নিহত হয় নাই এবং এক বা একাধিক অধ্যাপক আহত হইয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রহিয়াছে। সংবাদের নিয়মিত মাধ্যম হিসেবে এক্ষণে কার্য করিতেছেঃ তাবাসসুম জাহান

কুয়েটের সমাবর্তন আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১২ অনুষ্ঠিত হইবার কথা। কিন্তু এহেন ঘটনায় পূর্বতন শিক্ষার্থীগণ (অ্যালামনাই) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত আদৌ হইবে কি না বা তাহাতে যাইতে মন চাহিবে কি না তাহা লইয়া সন্দিহান; অনেকেই এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হইলে সমাবর্তন বয়কট করিবার সিদ্ধান্ত হইবে বলিয়া অবহিত করিয়াছেন।

বর্তমানে কুয়েট শান্ত, কোন অপপ্রচারেই কর্ণপাত করিবেন না। এসকল বিষয় লইয়া চিন্তা না করিয়া বরঞ্চ আপন কর্মে মনোনিবেশ করুন কিংবা নিদ্রাগমণ করুন – আশা করি ভবিষ্যতে এরূপ আরও অনেককিছু শ্রবণের সৌভাগ্য হইবে।

Published by

nafSadh

I study theory and applications of computing sciences.

7 thoughts on “কুয়েটে ভোজউৎসব, রণক্ষেত্র – রটনা, ঘটনা”

    1. ধন্যবাদ, আমি তথ্যটি এক ছাত্রের নিকট হইতে জানিয়াছি। ৭৪০ সম্ভবত মূল অনুষ্ঠানের ও ৮৮৫ সামগ্রিক বাজেট ধার্য হইয়াছিল।

      Like

  1. Ami shuneci budget chilo 950 taka..eto khudro bepar niye eto boro kisu hobar kotha na.er pesone j kalo ek dushshashon lukiye ase eta nishchit bole mone kora jay…

    Like

  2. khabarer jonno ja budget chilo tar tulonai khabarar man khub e kharap chilo ja purber dining committe jara nirdolio abt 340 taka dia arrange korta parto jekhane dea hoache 885 taka.
    ar andoloner rate vc bolechilo jdi kono studnt ar khoti hoi tahole tar dayetto tar…abng tate sha sign o korasilo so sha chailai tar dayetto areya jaita pare na….

    Like

    1. ভাষা সংযত ও মাথা ঠাণ্ডা রাখা উচিৎ॥ আমরা যাহা জানিতে পারিয়াছি তাহাই লিখিয়াছি, তোরা (আমি কুয়েটের অনুজদিগকে তুই করিয়াই কই) আরো যাহা জানিস, আমাদিগকে অবগত কর।

      Like

  3. kuet er baire chilam, khobor pelam leage-gula chtroder pitase. oto:por suni chatro mara gese. sune chokhe pani ese gesilo…tarpor druto kuet a aite gia dekhi gate er samne 1gada polapan, kichu cintam, daile leage-ar, r maximum rei cintam na…tader theika hotka 1jon amago deke koy vaira koi jan, edik asen…pash kataye jete caile dhoira bole, boro vai dakse kane jay na ???
    hall a jabar ojuhat diye konomote berolam tago khoppor theke…vitore giye sunlam, enara bikkhato ‘B’a’L’ colleg er leage-ar…

    Like

Leave a comment