বহু দিবস যাবৎ কলম লইয়া বসা হইতেছে না; কহিবেন তা হইবার কী আর যো আছে? আধুনিক যুগ কলমের যুগ নহে, ইহা চাবিতক্তা আর মূষিকের । আমিও উহাই কহিতেছি, কলম-কীবোর্ড কোন কিছু লইয়াই আর লিখা হয় নাই বহু দিন – প্রায় দুই মাস হইতে চলিল । আজিকে তাই কিছু এলোমেলো লেখা লিখিতে মন করিল এবং লিখিতে বসিলাম ।
সাধুবচন নামীয় এই খেরোখাতা বানাইবার পর, আমি কিছু সংক্ষিপ্ত কর্মে লিপ্ত হইয়াছিলাম; এরই মধ্যে সর্বশেষ রমজানের প্রারম্ভে হঠাৎই মনে হইলো, নামাজের সময় লইয়া কিছু কাজ করা যাইতে পারে। নামাজের ওয়াক্ত বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভৌগলিক অবস্থানে বিবিধরূপ হয়; তবে কিছু নিয়ম মানিয়াই হয়। এই চিন্তা হইতেই ওয়াক্তস্কোপ বানাইতে বসি দু’সপ্তাহ পূর্বে। ভাবিয়াছিলাম শনি-রবির ছুটিতে বানাইয়া ফেলিব, কিন্তু চোখ বাবাজি উঠায় তা আর হয় নাই। ২৪ তারিখ রাত্রিতে কিছু কাজ করিতে শুরু করি এবং প্রতিদিন অফিস হইতে আসিয়া অতঃপর ঘন্টা দুয়েক বসিতে পারি। ঢাকা শহরের যাহা অবস্থা তাহাতে কোন কর্মেই সময় দিইবার উপায় রহে না । প্রত্যূষে ন’টার অফিস ধরিতে আরো সকাল সাড়ে সাতটায় রওনা হইতে হয়; ছ’টার অফিস শেষ করিয়া আসিতে আসিতে আটটা-নয়টা তো বাজিয়াই যায় । বাসে করিয়া আসিতে গেলে আরও বেশি, বরং হাঁটিয়া আসিলে উপকার হয় – স্বাস্থ্য আর সময় উভয়ই বাঁচে। তবে দশ-বারো সহস্র কদম হাঁটিতে কষ্ট হইয়া তো যায়ই বটে! যাইহোক একরকম কসরৎ করিয়া অতঃপর ৩০-৩১ তারিখে কিছু কাজ করিয়া ওয়াক্তস্কোপ বানাইয়া ফেলিলাম, ওখানে এখন বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শহরের নামাজের ওয়ক্ত দেখা যাইবে, কেবল দক্ষিণ (ডান) পার্শ্ব হইতে নিজ দেশ আর শহরের নাম নির্বাচন করিতে হইবে, টাইমজোন খানা ঠিক করিতে হইবে । সাধারণত ইহা বাংলাদেশে প্রচলিত হিসাব মানিয়া ওয়াক্ত গণনা করিলেও, উত্তর (বাম) পার্শ্ব হইতে বিবিধ প্রণালী হইতে ১খানা বাছিয়া লওয়া যাইবে । বানাইয়া ইহা ওয়েবে দিলাম, কিছু লোক পছন্দও করিল বটে। এক দুজনের কাজে যদি বা আসেও তাতেও আমার আরাম হয়।
বঙ্গদেশে আমার বাস, বিচিত্র এই দেশ — একে তাহার রূপের তুলনা হয় না, তায় আবার দেশের মানুষও বিদিক; নানাবিধ কীর্তি কর্মে সারাদিন কাটিয়া যায় । এদেশবাসী সম্ভবত সবচেয়ে পারঙ্গম অপরের অনুপকার সাধনে, নাইলে কি আর প্রতিদিন সংবাদপত্রে পাঠ করি একজন আরেকজনের নামে কুৎসা গাহিতেছে কিংবা শিক্ষক তাহার ছাত্রীদিগকে ভালোবাসার আধিক্যে বলপূর্বক উপস্ত্রী বানাইয়া ফেলিতেছে ?! কিংবা, নিরপরাধ কিশোরকে অপরাধী বানাইয়া দিতেছে আরাক্ষা-বাহিনী স্বয়ং? অথবা, ডাকাত মনে করিয়া শবে বরাত নামীয় দেশে ধর্মীয় আমেজে পালিত রাত্রিতেই বা কীহেতু কিছু তরুণ ছাত্রকে আমরা গণপিটুনি দিইয়া শবে-মউৎ বানাইয়ে দিতেছি?
আমরা আবার খুব হুজুগ প্রবণ-ও বটে… একটা ঘটনা ঘটিলে আমরা তাহা লইয়া খুব উল্লম্ফন করি; কিছুকাল পর আরেক ঘটনা মিডিয়া আমাদিগকে পান করায়… আমরা সেই সুরাপাত্রে চুমুক দিয়া পূর্বের ঘটনা ভুলিয়া যাই। একদিন দেশ দশ ও কোটি মানুষের কিছু ঘটনা নিয়া আমরা হাপিত্যেশ করি, দেশপ্রেম – বিশ্বচিন্তন কিংবা সবুজ ধরিত্রীর প্রেরণায় আন্দোলন করিতে করিতেই দুইদিন পরে যখন দেখি একজন বিশেষ মানুষের উপর নির্যাতন হইতেছে, তখন আগের ব্যক্তি বা ঘটনা “মুড়ি খা” বলিয়া নতুন ঘটনা নিয়া লাফাইয়া পড়ি; ফলত পূর্বের ওই বিশেষ ঘটনায় আর জনতার মনসংযোগ থাকে না বিধায় সরকার কিংবা দায়ী কর্তৃপক্ষ যথেচ্ছভাবে ওই ঘটনা ধামাচাপা দিয়া দেয়; আমাদের হুদা আন্দোলন বেহুদা খরচের খাতায় পড়িয়া রয় । উত্তম! আমাদিগের তো এইরূপই করা সাজে; চিৎকার ম্যৎকারই আমাদিগের ‘বিধেয়’, ‘উদ্দেশ্য’ তো নিমিত্ত মাত্র ।
যাহাই হউক, এখন রমজান মাস চলিতেছে; মুসলমানগণ উক্ত মাসে সিয়াম সাধনা করিয়া এবং অধিক সালাত ও ইবাদতাদি করিয়া আল্লাহ্’র সান্নিধ্য লাভে উদ্যত হয়; বিশেষত ইহা আমাদিগের আত্মিক শুদ্ধি ও ঈমানি পুনরোজ্জীবনের সুযোগ বলিয়া গণ্য হয় । তদুপরি এই মাস লইয়া আলোচনা সমালোচনা কম হয় না বৈকি । কেউ রোজা রাখিবার ফজিলত আর কেউবা না রাখার তরিকৎ বাৎলায়; কারো আলোচনা বেরিয়ে আসে ধর্মের অসারতা নিয়া, কেউবা অধর্মের নিন্দা করে এ মাসেই। যাবতীয় দ্বন্দ বিদ্বেষ কাজ করিতে থাকে ঠিক আপন গতিতেই । 😦 উপরন্তু, সবচাইতে আনন্দের বিষয় হইয়া দাঁড়ায়, বাজারগমণ… যেসব পণ্য দুমাস আগে ১শ টাকা দরে ক্রয় করিতে হইতো এই মাসে তাহা ন্যূনতম দুইশত টাকা মূল্যে ক্রয় করিবার সুযোগ পাই; বেশি মূল্যের জিনিস কিনিয়া নিজেকে ধনী ভাবিতে কাহার না ভালো লাগে? যাহই হৌক্, মাস শেষে আসিবে ঈদ —— আহাঃ, সেই আনন্দেই তাহা হইলে আপাতত লেখনি থামাইয়া আজিকে এখানেই ‘কথন’ সমাপ্ত করি!